রাজশাহী প্রতিনিধি: রাজশাহী ও এর আশপাশের এলাকায় হঠাৎ করে পড়ে গেছে ব্রয়লার মুরগির দাম। পাইকারীতে এখন প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায়। এই দামে মুরগি বিক্রি করে উৎপাদন খরচই উঠছে না খামারিদের। ফলে লোকসানের মুখে পড়ে মাথায় হাত উঠেছে তাদের। অথচ খুচরা বাজারে এই মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১২৫ টাকা।
মুরগি খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত তিন-চার মাসে মুরগির দাম কেজিতে ৫০-৬০ টাকা কমে যাওয়ায় তাদের গুনতে হচ্ছে। এতে অনেক খামারি মুরগির ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন। খুচরা ব্যবসায়ীরাও বলছেন, পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তাদের মুরগি কিনতে হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজিতে। তাই তারাও খুব একটা দাম বাড়াচ্ছেন না।
মুরগি খামারিরা জানান, ব্রয়লারের একদিনের একটি বাচ্চা কিনতে হয় ৫০ টাকায়। বিক্রি উপযোগী করতে একেকটি বাচ্চার সময় লাগে ৩০ থেকে ৪০ দিন। বাচ্চা থেকে দেড় কেজি ওজনের একটি ব্রয়লার মুরগি করতে তিন কেজি খাবার দিতে হয়। এর সঙ্গে রয়েছে ওষুধ, বিদ্যুৎ ও লোকবল খরচ।
সব মিলিয়ে একেকটি ব্রয়লার মুরগি উৎপাদনে মোট খরচ হচ্ছে ১৩০ টাকা। অথচ বিক্রির সময় দাম পাওয়া যাচ্ছে ১১০ টাকা কেজি। এতে লাভ তো দূরের কথা প্রতিটি ব্রয়লারে ২০ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। খামারে হাজার হাজার বিক্রয়যোগ্য ব্রয়লার মুরগি থাকলেও দাম কমে যাওয়ায় এখন অনেকেই বিক্রি করতে পারছেন না। এ জন্য পাইকারী ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটকে দায়ি করেন তারা।
রাজশাহীর পবা উপজেলার পারিলা গ্রামের খামারি মোজাফফর আলী বলেন, খামারিরা বাজারে গিয়ে সরাসরি মুরগি বিক্রি করতে পারেন না। এজন্য তাদের ফড়িয়া ব্যবসায়ীদের শরণাপন্ন হতে হয়। এক্ষেত্রে খামারের মুরগি দুই থেকে তিন হাত বদল হয়। ফলে লাভের একটি অংশ মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটে যাচ্ছে। আর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন খামারিরা।
জেলার মোহনপুর উপজেলার বিদিরপুর এলাকার খামারি রহমান শেখ বলেন, একটা নির্দিষ্ট সময় পর ব্রয়লার মুরগি আর বড় হয় না। তাই দাম কম হলেও অনেকে ফড়িয়াদের কাছে পাইকারি ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে মুরগি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। বাজারে মুরগির দাম না বাড়লে এবার মুরগি ব্যবসায়ীদের বহু টাকা লোকসান হবে বলেও জানান তিনি।
রাজশাহী পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক জানান, পুরো জেলায় ব্রয়লার, লেয়ার এবং সোনালি মুরগি মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজার খামার রয়েছে। এসব খামারে প্রায় লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। খামারের অর্ধেকেরও বেশি ব্রয়লার মুরগির। সব খামারেই বিক্রি উপযোগী ব্রয়লার ও লেয়ার মুরগি রয়েছে। এসব খামারিরা এখন চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন।